ছাতকে বাঁধের কাজে নানা অনিয়ম
- আপলোড সময় : ০৯-০৩-২০২৫ ১১:২৬:০৬ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৯-০৩-২০২৫ ১১:২৬:০৬ অপরাহ্ন

ছাতক প্রতিনিধি ::
ছাতক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ২৮টি পিআইসির মধ্যে অন্তত ১৫টি বাঁধের কাজ টেকসই হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হাওরপাড়ের স্থানীয় কৃষকরা। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি-পিআইসিগুলোর দায়িত্বশীলরা এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো কর্তৃপক্ষের দাবি, হাওরের ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণে পিআইসি কমিটির কাজ নিয়মিতই মনিটরিং করা হচ্ছে।
হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি-পিআইসি প্রকল্পগুলোর কোথাও ৮০ ভাগ, আবার কোথাও ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। একাধিক বাঁধের কাজ টেকসই হয়নি বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও কিছু এলাকায় বাঁধে ঘাস লাগানো শুরুই করতে পারেনি পিআইসি’র সদস্যরা। তবে এসব প্রকল্পের কয়েকটি কাজ দৃশ্যমান হলেও অধিকাংশ বাঁধের কাজের নয়ছয় কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো সূত্রমতে, কাবিটা নীতিমালা অনুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বিভিন্ন হাওররক্ষা বাঁধ ভাঙন বন্ধ করণ/মেরামতের জন্য সরকার নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে আরও ১০ দিন সময় বৃদ্ধি করা হয়। চলতি বছরে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে মোট ২৮টি পিআইসি প্রকল্পের অধীনে বোরো ফসল রক্ষার জন্য উপজেলার নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, চরমহল্লা, দক্ষিণ খুরমা ও সিংচাপইড় ইউনিয়নে বরাদ্দ হয়েছে মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা।
পাউবো কর্তৃপক্ষ বলছে, এখন পর্যন্ত উপজেলায় পিআইসি বাস্তবায়ন কমিটির হিসেবে গড়ে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী নভেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্প নির্ধারণ ও পিআইসি গঠনের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় পিআইসির কমিটি গঠনে বিলম্ব হয়। বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য এলাকার স্থানীয় কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে পিআইসি গঠন করার কথা থাকলেও মূলত অধিকাংশ পিআইসির কমিটি গঠন করা হয়েছে অতীতের মতোই রাজনৈতিক বিবেচনায়, এমনটাই বলেছেন স্থানীয় অধিকাংশ কৃষক।
গতকাল রবিবার সরেজমিনে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, চাউলির হাওর, দেখার হাওর, নাইন্দার হাওর, মাছুখাল ও কুড়িবিলের ক্লোজারের কাজ এখনো অস¤পূর্ণ রয়েছে। ১নং থেকে ৬নং পিআইসি পর্যন্ত বাঁধের কাজের মাটি ভরাট, ড্রেসিং, স্লোব হলেও ঘাস লাগানো শেষ হয়নি। ৭নং পিআইসির কাজ হয়েছে অত্যন্ত নি¤œমানের। চরমহল্লা ইউনিয়নের এই পিআইসির কাজে মাটির ভরাট সঠিকভাবে হয়নি। ড্রেসিং করাও অস¤পূর্ণ, দুরমুজ করা হয়নি। কোন ঘাসও লাগানো হয়নি।
৮নং থেকে ১১নং পিআইসিতে চলছে ঘাস লাগানো কাজ তবে করা হয়নি দুরমুজ। ১২নং থেকে ২০নং পর্যন্ত পিআইসিতে মাটির কাজ শেষ হলেও ঘাস লাগানো হয়নি এখনো। ২১ নং থেকে ২৮নং পর্যন্ত পিআইসি’র বাঁধগুলোতে মাটি ভরাট করা হলেও বাঁধের ক¤েপকশন ও স্লোব সঠিকভাবে করা হয়নি।
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বৃহত্তর দেখার হাওরের বাঁধগুলো বোরো ফসল রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই হাওরটি ছাতক উপজেলা ছাড়াও দোয়ারাবাজার, শান্তিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদর পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়ায় বাঁধের পাশাপাশি এটি ক্লোজার হিসেবে পরিচিত। মূলত এটির মুখ দিয়েই ঢলের পানি প্রবেশ করলে এ হাওরের বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে যায়।
চরমহল্লা ইউনিয়নের ১৪নং পিআইসির সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, এখানে মাটির কাজ, ড্রেসিং ও কম্প্রেশনের কাজ শেষে ঘাস লাগানোর কাজ চলছে। আশপাশের এলাকায় ঘাস না পাওয়া কাজে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা ৩-৪ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি।
একই ইউনিয়নের চানপুর এলাকার বাসিন্দা ৮ নং পিআইসির সভাপতি ছালিক বলেন, আমি মাটির কাজ অনেক আগেই শেষ করেছি। ড্রেসিং শেষ করে এখন ঘাস লাগানো চলমান রয়েছে। এখানে ১২নং পিআইসির কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে ।
১৩নং পিআইসির সভাপতি ইলিয়াছ বলেন, মাটির কাজ শেষ। ঘাস লাগানোর কাজ করছি। ১৫নং পিআইসির বাঁধে নাম মাত্র দুরমুজ মারা হয়েছে। ঘাস লাগানো এখনও অস¤পূর্ণ।
জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ১৬নং পিআইসির বুকার ভাঙ্গা-চেচান প্রকল্পের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখানে ৯০ ভাগ কাজ হয়েছে। বর্তমানে ঘাস লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে।
একই ইউনিয়নের রাউলি গ্রামের বাসিন্দা ১৮নং পিআইসির প্রকল্পের সভাপতি জাবের আহমদ তইমুছ বলেন, আমার মাটির কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ড্রেসিংয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঘাস লাগানোর কাজও শেষ হবে। ১৯, ২০, ২১ ও ২২নং পিআইসির মাটির ড্রেসিং শেষে সবকটিতে ঘাস লাগানো চলছে এখনো।
২৮নং পিআইসি নোয়ারাই ইউনিয়নের অতিগুরুত্বপূর্ণ নাইন্দার হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় মাছুখাল ক্লোজারটির কাজ চলমান রয়েছে। এখানে মূলত খালের মুখ দিয়ে হাওরের জমাকৃত পানি বেরিয়ে যাচ্ছে বলে এখানে কাজের বিলম্ব বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও কাবিকা কমিটির সদস্য সচিব মো. মাসুম চৌধুরী বলেন, বাঁধ নির্মাণকাজ নিয়মিতই মনিটরিং করা হচ্ছে। আমাদের হিসেব অনুযায়ী সব কয়টি প্রকল্পের গড়ে ৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন ঘাস লাগানো ও দুরমুজ করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সবকটি বাঁধের কাজ শেষ হবে।
এ ব্যাপারে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কাবিখা কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন ঘাস লাগানোর কাজে একটু দেরি হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় দুর্বল কাজ হয়েছে। আমি এসওকে বলে দিয়েছি আমরা কাজ আদায় করে নেব। কাজ সঠিক না হলে আমরা বিল দেব না।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ